শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩২ অপরাহ্ন

টক মিষ্টি স্বাদের নরসিংদীর লটকন, খ্যাতি রয়েছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও

টক মিষ্টি স্বাদের নরসিংদীর লটকন, খ্যাতি রয়েছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও

নরসিংদী প্রতিনিধি :  দেশে লটকন চাষের জন্য বিখ্যাত নরসিংদী জেলা।এ জেলার বেলাবো, শিবপুর এবং রায়পুরা উপজেলার কিছু অংশে উৎপাদন হয় লটকন। জেলায় উৎপাদিত লটকনের দুই-তৃতীয়াংশ উৎপাদন হয় বেলাবো উপজেলায়। এই উপজেলার আমলাব ইউনিয়নের আমলাব, পাহাড় উজিলাবো, লাখপুর, আব্দুল্লাহ নগর সহ বেশ কিছু গ্রামে রয়েছে লটকনের বাগান। টসটসে রসালো হলুদ রং এর এই ফলের নাম লটকন হলেও স্থানীয় ভাষায় বলা হয় বগি বা গোডা। অনেকেই লটকনকে বলে থাকে দেশীয় হলুদ আঙ্গুরনরসিংদীর লটকন অন্য যে কোনো জেলা থেকে মিষ্টি এবং রসালো হয়ে থাকে। এখানকার বেলে ও দো-আঁশ মাটিতে ফলটির ফলন ভালো হয়। সেজন্য এ জেলার মানুষজন লটকনের বাণিজ্যিক চাষের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। আর্থিকভাবে লাভবানও হচ্ছে বলে প্রতিবছরই বাড়ছে এর আবাদ। লটকন চাষ করে ভাগ্যবদল হয়েছে বেলাবো উপজেলার কৃষকদের ।

নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার লটকন ফল দেশের চাহিদা মিটিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে রপ্তানি হচ্ছে। যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নরসিংদীর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি বা লাল রঙের মাটিতে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান বিদ্যমান থাকায় এ মাটিতে লটকনের উৎপাদন ভালো হচ্ছে। স্বাদে-গন্ধে হচ্ছে মিষ্টি এবং আকৃতিতেও হচ্ছে বড় বড়। নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার শত শত চাষি বর্তমানে লটকন বিক্রি করে অর্থনৈতিক সাফল্য পেয়েছেন।

নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলায় সবচেয়ে বেশি লটকনের বাগান রয়েছে। আগে লটকনের চাষের উদ্দেশ্যে তেমন বাগান করা হতো না। তখন অন্যান্য ফলগাছের সাথেই দু-একটি গাছ লাগানো হতো। লটকন চাষিরা জানান, আগে লটকনের তেমন চাহিদা ছিল না, দামও ছিল কম, সে কারণে কেউ লটকনের স্বতন্ত্র বাগান করার চিন্তা করত না। বর্তমানে চাহিদা ও মূল্য দুটিই বেড়েছে। লটকন একটি ঔষুধি ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। তাই এর চাহিদা ব্যাপক। আর বেলাবো উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া লটকন চাষে উপযুক্ত হওয়ায় এবং আর্থিক লাভের কারণে চাষিদের মধ্যে লটকন চাষে আগ্রহ বাড়ছে ।

বেলাবো উপজেলার লটকন চাষী ইসমাইল মিয়া বলেন , একটি পূর্ণবয়স্ক লটকন গাছে ৫ থেকে ১০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। অন্য ফসলের তুলনায় লটকনে উৎপাদন খরচ কম কিন্তু আয় বেশী। কান্দুয়া গ্রামের চাষী সুমন মিয়া বলেন, লটকন চাষে রোগ বালাই তেমন একটা নেই। চাহিদাও প্রচুর, এসব কারণেই দিন দিন নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় লটকন চাষের প্রসার ঘটছে। লটকন চাষ করে ব্যাপক সাফল্যও পাচ্ছেন চাষিরা।পাহাড় উজিলাবো গ্রামের কৃষক বিপ্লব মিয়া বলেন, চলতি বছরে ঘূর্ণিঝড় ও অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে লটকনের গাছ ভেঙে গেছে। তারপরও দাম বেশি হওয়ায় আমরা লাভবান।

আমলাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নুরুল হাসান ভূইয়া বলেন- বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল লটকন। বেলাবো উপজেলার আবহাওয়া ভালো হওয়ায় দিন দিন লটকন চাষ বাড়ছে। আমার নিজেরও ৩ একর লটকন বাগান রয়েছে। এবছর দাম বেশি হওয়ায় লাভবান হয়েছি। বেলাবো উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিম-উর-রউফ খাঁন বলেন, এ বছর উপজেলায় প্রায় ২০৫ হেক্টর জমিতে লটকন চাষ হলেও ১৮৫ হেক্টর জমি থেকে লটকন উৎপাদন হচ্ছে। এ মৌসুমে এখানে প্রায় ৩ হাজার ৫শ মেট্রিক টন লটকন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যার বাজার মূল্য ৬ কোটি টাকা। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ হতে সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতার করে আসছি।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |